১৯৭১ সালের রক্ত ঝরা দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তিবাহিনী ও এলাকার আপামর জন সাধারনের অংশ গ্রহনে মুক্ত হয়েছিল গোপালগঞ্জ জেলার বিভিন্ন অঞ্চল । এরই ধারাবাহিকতায় ১৯ ডিসেম্বর কাশিয়ানী মুক্ত দিবস । ভাটিয়াপাড়া কাশিয়ানী উপজেলার এক ছোট্ট জনপথ । ভাটিয়াপাড়া এবং মধুমতি নদী যেন মুক্তিযুদ্ধের জানা অজানা অনেক কাহিনীর নিরব সঙ্গী । ১৬ ডিসেম্বর পাক বাহিনী পরাজয় বরণ করলেও ভাটিয়াপাড়ার পাক বাহিনী লড়ে যায় ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত । ভাটিযাপাড়ার যুদ্ধে অংশ নেন এ অঞ্চলের শত শত মুক্তিযোদ্ধা অংশ গ্রহন করেন । ওড়াকান্দি উচ্চ বিদ্যালয় ছিল ফরিদপুর মুক্তি বাহিনীর হেড কোর্য়াটার । ১৯ অথবা ২০ এপ্রিল, ১৯৭১ সাল। পাকিস্তানী সেনাবাহিনী এসে ঘাটি গাড়ে ভাটিয়াপাড়া ওয়ারলেস স্টেশনে। জনমনে দেখা দেয় আতঙ্ক। মুহুর্তের মধ্যে খবর চলে যায় কাশিয়ানীর হেড কোয়াটার ওড়াকান্দিতে, রাতইল সাবহেড কোয়াটার ক্যাম্পে। পাকিস্তানী সেনাদের পরাস্ত করতে সকল প্রস্তুতি নিতে থাকে ক্যাম্প। শুরু হয় বিচ্ছিন্নভাবে খন্ড খন্ড যুদ্ধ। রাতের অন্ধকারে গ্রামে গ্রামে চলতে থাকে প্রশিক্ষণ। ক্যাপ্টেন নুরুন্নাহারের নেতৃত্বে নায়েবুন্নেছা ইনস্টিটিউটে খোলা হয় প্রশিক্ষণ ক্যাম্প। প্রশিক্ষিত এলাকাবাসী দেশ রক্ষার যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। পাকিস্তানী সেনারা ইতনা গ্রাম আক্রমণ করে ২ জনকে হত্যা করে, জ্বালিয়ে দেয় ঘর-বাড়ি। পেছন থেকে মাঝে মাঝে আক্রমণ করে ভাটিয়াপাড়া ও বুথপাশা গ্রামে। মুক্তিবাহিনীর সাথে পাকবাহিনীর যুদ্ধ হয় কালনা ঘাটে। যুদ্ধে পাকবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার কোরের ছাবিবর খানসহ দুজন পাকিস্তানী মিলিশিয়াকে রাতইল সাব ক্যাম্পে ভাটিয়াপাড়া পাকসেনামুক্ত না হওয়া পর্যন্ত বন্দী করে রাখা হয়। প্রায়ই বিচ্ছিন্নভাবে আক্রমণ চলতে থাকে পাক বাহিনীর ওপর। এদিকে নবম সেক্টর কমান্ডার মেজর হুদা রাতইল ক্যাম্পে আসেন এবং তাঁর নেতৃত্বে খন্ড খন্ড যুদ্ধ হয় পাক সেনাদের সাথে। আগস্ট মাসে ওড়াকান্দি ও রাতইল ক্যাম্পের মুক্তিযোদ্ধারা একযোগে পাক বাহিনীর গানবোট আক্রমণ করে। এ যুদ্ধে ১৬ থেকে ১৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয় এবং পাকসেনা মারা যায় ৩৭ জন। সেপ্টেমবর তেকে অক্টোবরের প্রথম দিকে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মুক্তিযোদ্ধারা রাতইল ক্যাম্পে আসতে শুরু করে। যুদ্ধ চলতে থাকে পাকসেনাদের সাথে। এরই মধ্যে দেশ স্বাধীনের ঘোষণা আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হয়। কিন্তু ভাটিয়াপাড়া তখনও শত্রুমুক্ত হয়নি। নির্যাতন নিপীড়ণ চলতেই থাকে। ১৮ ডিসেমবর মেজর হুদা, সাইফ উদ্দীন মোহাম্মদ, ইসমত কাদের গামা, জগলুল কাদের জুলু, বশির মোহাম্মদ, ক্যাপ্টেন বাবুলসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধা রাতইল ক্যাম্পে আটককৃত ছাবিবর খান ও দুই মিলিশিয়াকে সাথে করে ভাটিয়াপাড়া সেনা ক্যাম্পে আক্রমণ চালান হয়। শুরু হয় প্রচন্ড যুদ্ধ। এরই মধ্যে জেনারেল মঞ্জু ভারতীয় সেনাবাহিনী নিয়ে ভাটিয়াপাড়া পৌঁছায়। বিভিন্ন দিক থেকে আক্রমণ ও চাপের মুখে অবশেষে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হয়। কাশিয়ানীকে পাকসেনামুক্ত রাখতে ওড়াকান্দিতে প্রধান ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। মধুমতি নদীর তীরবর্তী রাতইলে স্থাপন করা হয় সাবহেড কোয়ার্টার ক্যাম্প। ফুকরা এম.এম একাডেমীতে অবস্থান নেয় মুক্তিসেনারা। ভাটিয়াপাড়া ওয়ারলেস স্টেশনে স্থাপিত পাক সেনাঘাটি থেকে মধুমতি নদীপথে টহল দিত পাক সেনারা। তীরস্থ ঘরবাড়ি, জানমালের ওপর চালাতে থাকে নির্মম নির্যাতন। এলাকার মুক্তিকামী জনতা তা প্রতিহত করার নীল নকশা তৈরি করে ফেলে নিমিষেই। জুন-জুলাইয়ের দিকে মধুমতি নদীর ফুকরা ঘাটে টহলরত পাকসেনাদের গানবোটে বাধা সৃষ্টি করে কটা সর্দার ও ফেলু সর্দার নামের দুজন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা। মুহুর্তের মধ্যে খবর ছড়িয়ে পড়ে ওড়াকান্দি হেড কোয়াটারসহ রাতইল সাবহেড কোয়াটার ক্যাম্পে। যুদ্ধের প্রস্ত্ততি নিয়ে এগিয়ে আসে ফুকরা স্কুলে অবস্থানরত মুক্তিবাহিনী। মুক্তিকামী মানুষের সাথে পাক সেনাদের প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। পিছু হটতে বাধ্য হয় পাক সেনারা। মুক্ত হয় কাশিয়ানী। স্বাধীনতার জয়গান উচ্চারিত হয় আকাশে বাতাসে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস