বারাশিয়া নদীর পূর্বপাড়ে ১.৭ শতাংশের এক চিলতে জমি। তৎকালীন জমিদার গিরীশ চন্দ্র সেনের বাড়ি থেকে ৫০০ গজ উত্তর-পশ্চিমে এবং বর্তমান কাশিযানী এম.এ খালেক সরকারী বালিকা বিদ্যালয় লাগোয়া পশ্চিম পার্শ্বে এই জমিটুকুর অবস্থান। জানা যায় এই এক চিলতে জমির ওপর প্রথমে ছোট্ট একটি টিনের ঘর ছিল। মানুষের চোখে পড়ার মত কিছুই ছিলনা। অভাবী যন্ত্রনা ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠত এই ঘরে। কিন্তু বেশি দিন না যেতেই টিনের ঘরটি রূপ পায় ইট পাথরের এক আনন্দাশ্রমে। সুনিপুণ কারুকার্য আর সুদর্শন ভঙ্গিমায় দন্ডায়মান বাড়িটি নিমিষের মধ্যেই কাশিযানীবাসীকে তাক লাগিয়ে দেয়। জনমনে উচ্চারিত হয় এটি সখীচরনের বাড়ি। বারাশিয়া নদীর কলকল দ্বনিতে আন্দোলিত ছিল পশ্চিমমুখী এই বাড়িটি। চারপাশে ছিল উঁচু প্রাচীর। দিবা-নিশি বিনিদ্র মাথা উঁচু করে পাহারা দিত অনেক গাছ-গাছালি। দ্বিতল ভবনটির দোতলার সম্মুখ ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে উপভোগ করা যেত প্রকৃতির অপার মহিমা। ব্যালকনির দুপাশে দুটি কক্ষ, পিছনের বড় কক্ষটিকে বাহুর মত আগলে ধরে রেখেছে। বড় কক্ষের পিছনে রয়েছে দুটি লমবা বারান্দা। প্রধমটির উত্তর প্রান্তে দোতলায় উঠতে সিঁড়ি রয়েছে। মূল ভবনের পিছনে তিন কক্ষ বিশিষ্ট একটি একতলা ছোট্ট পাকা ভবন রয়েছে। জানা যায় এটি তখন রন্ধনশালা হিসেবে ব্যবহৃত হত। এহেন স্বপ্নের সুরম্য বাসভবনের মধ্যে সখীচরন রায় নিজেকে লুকিয়ে রাখেননি। সামাজিক কর্মকান্ডে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। কাশিযানীর শ্বশ্মানভূমি (১০ শতাংশ) তিনিই দান করেছেন। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের সময় সবকিছুর মোহ ত্যাগ করে সমাজদরদী এই সখীচরন পাড়ি জমান ভারতে। রয়ে যায় তাঁর অমর কীর্তি লাল রঙের বাসভবনটি। বাড়িটি দেখভালের জন্য অবস্থান করে কাশিয়ানীর শান্তি রাম খাঁর মা। জনশূণ্য বাড়িটি পরবর্তী সময়ে সার্কেল অফিসার (ডেভেলপমেন্ট) -এর কার্যালয় হিসেবে আবার প্রাণ ফিরে পায়। সময়ের পরিবর্তনে এটি ১৯৬৭ সালের
ফেব্রুয়ারী মাসে সার্কেল অফিসার (রাজস্ব)-এর কার্যালয় হিসেবে প্রতিস্থাপিত হয়। কিন্তু ১৯৬৯ সালের দিকে দেখা দেয় ছন্দপতন। সার্কেল অফিসারের দাপ্তরিক কাজ কর্ম স্থানান্তর করে নেয়া হয় সীতানাথ সরকারের বাড়িতে (বর্তমানে উপজেলা চেয়ারম্যান কার্যালয়ের পিছনে)। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর অফিসটির উপর আবার নেমে আসে অস্থিরতা। অফিসের যাবতীয় কাগজপত্র গুটায়ে আবার ফিরে যেতে হয় সখীচরন রায়ের বাড়িতে। এরই মধ্যে সখীচরনের রেখে যাওয়া সমস্ত সম্পত্তি অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে পরিগণিত হয়। জনসাধারণের পদরেনুতে ধন্য হয় বাড়িটি। পরিবর্তনের স্রোতধারায় বাড়িটি সাজে নতুন সাজে। ১৯৮৯ সালের জুলাই মাস থেকে উপজেলা ভূমি অফিস নামে সখীচরনের বাড়িটি চারিদিকে পরিচিতি লাভ করে। স্মৃতির পরিচায়ক সখীচরন রায়ের এই স্বপ্নের বাড়িটি এখনও উপজেলা ভুমি অফিস হিসেবে সেবা দিয়ে যাচ্ছে কাশিয়ানীবাসীকে।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS